28 Feb 2025, 10:47 pm

আইসিসির রায়ে ইসরাইল কর্তৃক  ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখলের গোড়ার ইতিহাস উপেক্ষিত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত বা আইসিসি ইহুদিবাদীদের হাতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখলের গোড়ার ইতিহাস উপেক্ষা করে কেবল ১৯৬৭ সালে ইসরাইলের হাতে দখলীকৃত ভূখণ্ডকে ফিলিস্তিনিদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলেছে। ওই আদালত বলেছে, ১৯৬৭ সালে যেসব ফিলিস্তিনিকে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে কেবল তাদেরকে ফিরে আসার সুযোগ দিতে হবে।

পর্যবেক্ষণ- আমরা যে বিশ্বে বসবাস করি সেখানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত বলে দাবি করা হলেও আসলে এখানে এমন সব উপায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে যা উপনিবেশবাদী যুগের অন্ধকার সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।  আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত বা আইসিসির সাম্প্রতিক ফিলিস্তিন বিষয়ক রায়ের মাধ্যমে শুধু যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ধারেকাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি তাই নয়, বরং এর ফলে উপনিবেশবাদীদের সঙ্গে এই বিচার ব্যবস্থার সহযোগিতার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। ওই রায়ে আরেকবার প্রমাণিত হচ্ছে, আন্তর্জাতিক আইন বিশ্বে স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নব্য উপনিবেশবাদীদের অপতৎপরতাকে বৈধতা দেয়ার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ একটি অন্যায় প্রস্তাব অনুমোদন করে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে দুই ভাগে বিভক্ত করে সেখানে ইহুদিবাদীদের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে দেয়।  ১৮১ নম্বর প্রস্তাব হিসেবে খ্যাত ওই প্রস্তাবে ফিলিস্তিনের শতকরা ৫৬ ভাগ ভূমি ইউরোপ থেকে আসা ইহুদি অভিবাসীদের দখলে ছেড়ে দিয়ে উপনিবেশবাদের ইতিহাসে এক নয়া অধ্যায়ের সূচনা করা হয়। এরপর ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে আগের সেই ৫৬ শতাংশ ভূমির বাইরে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরের ওপরও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে ইসরাইল। আইসিসি তার সাম্প্রতিক রায়ে ১৯৪৭ সালের সেই দখলদারিত্বকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে শুধুমাত্র ১৯৬৭ সালের পর ফিলিস্তিন থেকে বহিষ্কৃত জনগোষ্ঠীকে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে আসার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত ফিলিস্তিনের ইতিহাসকে ‘আলোচনার উপযুক্ত’ এবং ‘ভুলে যেতে হবে’ এই দুই ভাগে বিভক্ত করেছে।

এতে আরো সুস্পষ্টভাবে যে বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে তা হচ্ছে, পিতৃপুরুষের ভিটেমাটিতে ফিরে আসার সুযোগ ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার; আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কোনো অনুকম্পা নয়। ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে কেবল দখলদারিত্বেরই অবসান হবে না বরং এর মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া একটি ভূখণ্ডের পুনর্নির্মাণও শুরু হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালত ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাবর্তনকে একটি আইনি প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করেছে যা উপনিবেশবাদেরই স্বার্থ রক্ষা করছে।

ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের রায়ে এমনকি ‘বর্ণবাদ’ শব্দটি পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়নি। অথচ ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইহুদিবাদী ইসরাইলের নীতি শুধু মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনই নয় সেইসঙ্গে তা বর্ণবাদী শাসনব্যবস্থারও সুস্পষ্ট উদাহরণ।  আইসিসি এই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করার মাধ্যমে ফিলিস্তিনের ওপর ইহুদিবাদীদের দখলদারিত্বকে নিছক ‘মানবাধিকার’ বিষয়ক একটি সমস্যায় পরিণত করেছে।

তবে এ ঘটনায় বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষদের হতাশ হলে চলবে না। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অসম্পূর্ণ হলেও তা বিশ্ব জনমতকে ফিলিস্তিনের পক্ষে সংগঠিত করার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। এই রায়কে উপলক্ষ করে এখন ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে বিভিন্ন দেশের সরকারের ওপর এসব দেশের জনগণ চাপ সৃষ্টি করতে পারে।  এক্ষেত্রে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য স্বাধীনতা, সাম্য ও শান্তির দাবিতে অহিংস আন্দোলন- বিডিএস, সারাবিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের জন্য আদর্শ হিসেবে কাজ করতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী অহিংস আন্দোলন থেকে উদ্বুব্ধ হয়ে এখন থেকে ১৭ বছর আগে আন্তর্জাতিক আন্দোলন বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট এন্ড স্যাংশন্স (Boycott Divestment and Sanctions)  বা বি বিডিএস প্রতিষ্ঠিত হয়।  সংস্থাটি এরইমধ্যে বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন, সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন ও গির্জাসহ আরো নানা মানবাধিকার আন্দোলনের সমর্থন লাভ করেছে।

এই আন্দোলন অধিকৃত ফিলিস্তিনে অবৈধ ইহুদি বসতি নির্মাণ এবং বর্ণবাদী ইসরাইল সরকারের প্রতি পাশ্চাত্যের অন্ধ সমর্থনের ঘোর বিরোধিতা করছে। সেইসঙ্গে ফিলিস্তিন বিষয়ক সব আন্তর্জাতিক আইন বাস্তবায়নে ইসরাইলকে বাধ্য করতে চাপ প্রয়োগের দাবি জানাচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

স্টাফ রিপোর্টার : এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে ৩৪ জন ছাত্র-ছাত্রী জিপিএ -৫ পাওয়ার মধ্য দিয়ে ঝিনাইদহের  মহেশপুরের শীর্ষে স্থান দখল করে নিয়েছেন যাদবপুর কলেজ।

২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় যাদবপুর কলেজ থেকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় ১২৯ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহন করে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে শতভাগ জিপিএ-৫ সহ ১২৮ ছাত্র-ছাত্রী পাস করেছে।

যাদবপুর কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, কলেজের সকল শিক্ষক-শিখিক্ষা আর অভিভাবকদের প্রচেষ্টার কারনেই আজ যাদবপুর কলেজের এ সুনাম অর্জন করতে পেরেছে।

তিনি আরো জানান, অমি প্রতিটা অভিভাবকে কাছে কৃতজ্ঞ।

মহেশপুরের নামি দামি ১০টি কলেজকে টপকিয়ে যাদবপুর কলেজ আজ শীর্ষে উঠল।

 

 

 

 

এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে ঝিনাইদহের মহেশপুরের শীর্ষে যাদবপুর কলেজ

  • Visits Today: 14618
  • Total Visits: 1684193
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1741

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শুক্রবার, ২৮শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ইং
  • ১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)
  • ১লা রমজান, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১০:৪৭

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
     12
       
15161718192021
293031    
       
  12345
20212223242526
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018